বৃহস্পতিবার, ২ এপ্রিল, ২০১৫

গোলাপ ফুল চাষ


  1. গোলাপ ফুলকে ফুলের রাণী বলা হয়। রঙ, গন্ধ ও
  2. সৌন্দর্যের জন্য গোলাপ ফুল সবার কাছেই প্রিয়।
  3. এর ইংরেজি নাম Rose ও বৈজ্ঞানিক নাম Rosa
  4. sp. আমাদের দেশে নানান রঙ ও জাতের গোলাপ ফুল
  5. চাষ করা হয়ে থাকে। যেমন-ক্রিমশন গ্লোরি, পাপা-
  6. মাইল্যান্ড, টিপটপ, হানিমুন, সানসিল্ক, রোজিনা,
  7. গোল্ডেন ইত্যাদি। জাত ভেদে গোলাপ ফুলের রঙ,
  8. আকৃতি ও গন্ধ ভিন্ন হয়ে থাকে। আমাদের দেশের
  9. সাভার, যশোর, কুষ্টিয়া প্রভৃতি জায়গায় এখন
  10. ব্যবসায়িক ভিত্তিতে গোলাপ ফুল চাষ ও বাজারজাত
  11. করা হচ্ছে।
  12. বাজার সম্ভাবনা
  13. আমাদের দেশে সারাবছরই গোলাপ ফুলের চাহিদা
  14. থাকে। সৌখিন মানুষ তার ঘর সাজানোর জন্য ফুল
  15. ব্যবহার করে। এছাড়া বিয়ে, গায়ে হলুদ, বিভিন্ন সভা,
  16. সমাবেশ অনুষ্ঠানের স্থান ফুল দিয়ে সাজানো হয়ে
  17. থাকে। তাই বলতে গেলে সারাবছরই ফুলের চাহিদা
  18. থাকে। আমাদের দেশের প্রায় সব জেলা শহরে ফুলের
  19. দোকান দেখা যায়। এসব ফুলের দোকানে ফুল
  20. সরবরাহ করে আয় করা সম্ভব। এছাড়া গোলাপ ফুল
  21. চাষ করে দেশীয় বাজারে বিক্রয়ের পাশাপাশি ফুল
  22. বিদেশেও রপ্তানী করা সম্ভব। এক্ষেত্রে বিভিন্ন
  23. রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সহায়তা দিয়ে থাকে।
  24. রজনীগন্ধা ফুল বিদেশে রপ্তানি করার জন্য এসব
  25. প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
  26. গোলাপ ফুল উৎপাদন কৌশল
  27. * চাষের উপযোগী পরিবেশ ও মাটি
  28. জাত
  29. গোলাপ ফুলকে অনেক শ্রেণীতে ভাগ করা যেতে
  30. পারে। তবে উল্লেখযোগ্য শ্রেণীগুলো হলো-
  31. ১. হাইব্রিড টি (Hybrid Teas) : এ শ্রেণীর
  32. ফুলগুলো বেশ বড়, সুগঠিত ও অনেক পাপড়িবিশিষ্ট।
  33. কাটা ফুল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ক্রিমশন গ্লোরি,
  34. পাপা-মাইল্যান্ড, টিপটপ ইত্যাদি এ শ্রেণীর জাত।
  35. ২. ফ্লোরিবান্দা (Floribunda) : এ শ্রেণীর
  36. ফুলগুলো আকারে ছোট এবং থোকায় ধরে।
  37. কতকগুলো জাত কাঁটা ফুলের জন্য চাষ করা হয়।
  38. হানিমুন, সানসিল্ক, টিপটপ ইত্যাদি এ শ্রেণীর জাত।
  39. ৩. পলিয়েন্থা (Polyantha) : এ শ্রেণীর ফুলগুলো
  40. আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট এবং বড় বড় থোকায়
  41. ধরে। জর্জ এলগার, ক্যামিও, আইডিয়াল ইত্যাদি এ
  42. শ্রেণীর জাত।
  43. ৪. মিনিয়েচার (Miniature) : এ শ্রেণীর গাছ ছোট,
  44. পাতা ছোট এবং ফুল ছোট ছোট হয়। রোজিনা,
  45. গোল্ডেন, ইয়ালো ডল ইত্যাদি এ শ্রেণীর জাত।
  46. তথ্যসূত্র : কৃষি প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল, জুন ২০০৭,
  47. Microfinance for Marginal and Small
  48. Farmers (MFMSF) Project, প্রজেক্ট
  49. ম্যানেজমেন্ট সেল-১, পল্লী কর্ম-সহায়ক
  50. ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ), ঢাকা।
  51. বংশবিস্তার
  52. কাটিং, গুটিকলম ও ‘টি’ বাডিং এর মাধ্যমে গোলাপের
  53. বংশবিস্তার করা হয়। কাটিং ও গুটি কলম জুলাই-
  54. আগস্ট মাসে এবং ‘টি’ বাডিং ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে
  55. শেষ করতে হয়।
  56. জমি তৈরি
  57. ১. সাধারণত চারা রোপণের ২-৩ সপ্তাহ আগে জমিকে
  58. গভীরভাবে চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝরঝরে ও সমান
  59. করে নিতে হবে।
  60. ২. এরপর জমিতে ১.২ মিটার চওড়া ও পরিমাণমত
  61. লম্বা উঁচু বেড তৈরি করে নিতে হবে।
  62. ৩. দু’টি বেডের মাঝখানে পানি নিকাশ ও সেচের জন্য
  63. নালা তৈরি করতে হবে।
  64. ৪. বেডে গাছ লাগানোর জন্য এক মিটার গভীর এবং
  65. ৬০ সে.মি. চওড়া গর্ত করতে হবে।
  66. ৫. গর্ত করার সময় ২০ সে.মি. গভীর উপরের মাটি
  67. আলাদা করে রেখে বাকি মাটির সাথে ১০ কেজি
  68. কম্পোস্ট, আধা কেজি খৈল ও একমুঠো হাড়ের
  69. গুঁড়ো মিশিয়ে নিতে হবে।
  70. ৬. বাকি উপরের মাটির সাথে প্রয়োজনমত গোবর
  71. মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে নিতে হবে।
  72. ৭. বড় জাতের গোলাপের জন্য বেশি গোবর সার
  73. মিশিয়ে গর্ত ভরাট করতে হবে। বড় জাতের
  74. গোলাপের জন্য এক গর্ত থেকে অন্য গর্তের দূরত্ব
  75. ৬০ সে.মি. এবং ছোট জাতের জন্য ৩০ সে.মি. দূরত্ব
  76. বজায় রাখতে হবে।
  77. চারা রোপণ
  78. ১. নতুন চারা না লাগিয়ে এক বছর পুরানো চারা
  79. লাগানো উচিত।
  80. ২. গর্তের মধ্যে চারা সোজাভাবে লাগাতে হবে।
  81. ৩. চারার শেকড় মাটি দিয়ে সম্পূর্ণ ঢেকে দিতে হবে।
  82. ৪. জোড় কলমের মাধ্যমে তৈরি চারার জোড়ের
  83. জায়গাটি মাটি থেকে অন্তত ৩-৪ সে.মি. উপরে
  84. রাখতে হবে।
  85. সার প্রয়োগ
  86. কৃষকদের মতে গুণগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে
  87. হলে গোলাপ ফুলের গাছে যতটুকু সম্ভব জৈব সার
  88. প্রয়োগ করতে হবে। মাটি পরীক্ষা করে মাটির ধরণ
  89. অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে জৈব সার
  90. ব্যবহার করলে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশ উভয়ই
  91. ভালো থাকবে। বাড়িতে গবাদি পশু থাকলে সেখান
  92. থেকে গোবর সংগ্রহ করা যাবে। নিজের গবাদি পশু না
  93. থাকলে পাড়া-প্রতিবেশি যারা গবাদি পশু পালন করে
  94. তাদের কাছ থেকে গোবর সংগ্রহ করা যেতে পারে।
  95. এছাড়া ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে আবর্জনা
  96. পচা সার ব্যবহার করা যেতে পারে। বাড়ির আশেপাশে
  97. গর্ত করে সেখানে আবর্জনা, ঝরা পাতা ইত্যাদির
  98. স্তুপ করে রেখে আবর্জনা পচা সার তৈরি করা
  99. সম্ভব।
  100. সেচ
  101. ১. চারা রোপণের পর, চারার গোড়ায় প্রাথমিক
  102. অবস্থায় ঘন ঘন পানি দিতে হবে।
  103. ২. চারা মাটিতে ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে নতুন
  104. ডালপালা ছাড়ার পর খরা মৌসুমে প্রতি ১০ দিন পর
  105. পর একবার সেচ দিলেই চলবে।
  106. ৩. প্রতিবার পানি সেচের পর গাছের গোড়ার মাটি
  107. ঝরঝরে করে দিতে হবে।
  108. রোগবালাই ও তার প্রতিকার
  109. গোলাপ ফুলের বাগানে পোকার আক্রমণ হলে
  110. স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা
  • যেতে পারে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন