গোলাপ ফুল চাষ
- গোলাপ ফুলকে ফুলের রাণী বলা হয়। রঙ, গন্ধ ও
- সৌন্দর্যের জন্য গোলাপ ফুল সবার কাছেই প্রিয়।
- এর ইংরেজি নাম Rose ও বৈজ্ঞানিক নাম Rosa
- sp. আমাদের দেশে নানান রঙ ও জাতের গোলাপ ফুল
- চাষ করা হয়ে থাকে। যেমন-ক্রিমশন গ্লোরি, পাপা-
- মাইল্যান্ড, টিপটপ, হানিমুন, সানসিল্ক, রোজিনা,
- গোল্ডেন ইত্যাদি। জাত ভেদে গোলাপ ফুলের রঙ,
- আকৃতি ও গন্ধ ভিন্ন হয়ে থাকে। আমাদের দেশের
- সাভার, যশোর, কুষ্টিয়া প্রভৃতি জায়গায় এখন
- ব্যবসায়িক ভিত্তিতে গোলাপ ফুল চাষ ও বাজারজাত
- করা হচ্ছে।
- বাজার সম্ভাবনা
- আমাদের দেশে সারাবছরই গোলাপ ফুলের চাহিদা
- থাকে। সৌখিন মানুষ তার ঘর সাজানোর জন্য ফুল
- ব্যবহার করে। এছাড়া বিয়ে, গায়ে হলুদ, বিভিন্ন সভা,
- সমাবেশ অনুষ্ঠানের স্থান ফুল দিয়ে সাজানো হয়ে
- থাকে। তাই বলতে গেলে সারাবছরই ফুলের চাহিদা
- থাকে। আমাদের দেশের প্রায় সব জেলা শহরে ফুলের
- দোকান দেখা যায়। এসব ফুলের দোকানে ফুল
- সরবরাহ করে আয় করা সম্ভব। এছাড়া গোলাপ ফুল
- চাষ করে দেশীয় বাজারে বিক্রয়ের পাশাপাশি ফুল
- বিদেশেও রপ্তানী করা সম্ভব। এক্ষেত্রে বিভিন্ন
- রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সহায়তা দিয়ে থাকে।
- রজনীগন্ধা ফুল বিদেশে রপ্তানি করার জন্য এসব
- প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
- গোলাপ ফুল উৎপাদন কৌশল
- * চাষের উপযোগী পরিবেশ ও মাটি
- জাত
- গোলাপ ফুলকে অনেক শ্রেণীতে ভাগ করা যেতে
- পারে। তবে উল্লেখযোগ্য শ্রেণীগুলো হলো-
- ১. হাইব্রিড টি (Hybrid Teas) : এ শ্রেণীর
- ফুলগুলো বেশ বড়, সুগঠিত ও অনেক পাপড়িবিশিষ্ট।
- কাটা ফুল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ক্রিমশন গ্লোরি,
- পাপা-মাইল্যান্ড, টিপটপ ইত্যাদি এ শ্রেণীর জাত।
- ২. ফ্লোরিবান্দা (Floribunda) : এ শ্রেণীর
- ফুলগুলো আকারে ছোট এবং থোকায় ধরে।
- কতকগুলো জাত কাঁটা ফুলের জন্য চাষ করা হয়।
- হানিমুন, সানসিল্ক, টিপটপ ইত্যাদি এ শ্রেণীর জাত।
- ৩. পলিয়েন্থা (Polyantha) : এ শ্রেণীর ফুলগুলো
- আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট এবং বড় বড় থোকায়
- ধরে। জর্জ এলগার, ক্যামিও, আইডিয়াল ইত্যাদি এ
- শ্রেণীর জাত।
- ৪. মিনিয়েচার (Miniature) : এ শ্রেণীর গাছ ছোট,
- পাতা ছোট এবং ফুল ছোট ছোট হয়। রোজিনা,
- গোল্ডেন, ইয়ালো ডল ইত্যাদি এ শ্রেণীর জাত।
- তথ্যসূত্র : কৃষি প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল, জুন ২০০৭,
- Microfinance for Marginal and Small
- Farmers (MFMSF) Project, প্রজেক্ট
- ম্যানেজমেন্ট সেল-১, পল্লী কর্ম-সহায়ক
- ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ), ঢাকা।
- বংশবিস্তার
- কাটিং, গুটিকলম ও ‘টি’ বাডিং এর মাধ্যমে গোলাপের
- বংশবিস্তার করা হয়। কাটিং ও গুটি কলম জুলাই-
- আগস্ট মাসে এবং ‘টি’ বাডিং ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে
- শেষ করতে হয়।
- জমি তৈরি
- ১. সাধারণত চারা রোপণের ২-৩ সপ্তাহ আগে জমিকে
- গভীরভাবে চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝরঝরে ও সমান
- করে নিতে হবে।
- ২. এরপর জমিতে ১.২ মিটার চওড়া ও পরিমাণমত
- লম্বা উঁচু বেড তৈরি করে নিতে হবে।
- ৩. দু’টি বেডের মাঝখানে পানি নিকাশ ও সেচের জন্য
- নালা তৈরি করতে হবে।
- ৪. বেডে গাছ লাগানোর জন্য এক মিটার গভীর এবং
- ৬০ সে.মি. চওড়া গর্ত করতে হবে।
- ৫. গর্ত করার সময় ২০ সে.মি. গভীর উপরের মাটি
- আলাদা করে রেখে বাকি মাটির সাথে ১০ কেজি
- কম্পোস্ট, আধা কেজি খৈল ও একমুঠো হাড়ের
- গুঁড়ো মিশিয়ে নিতে হবে।
- ৬. বাকি উপরের মাটির সাথে প্রয়োজনমত গোবর
- মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে নিতে হবে।
- ৭. বড় জাতের গোলাপের জন্য বেশি গোবর সার
- মিশিয়ে গর্ত ভরাট করতে হবে। বড় জাতের
- গোলাপের জন্য এক গর্ত থেকে অন্য গর্তের দূরত্ব
- ৬০ সে.মি. এবং ছোট জাতের জন্য ৩০ সে.মি. দূরত্ব
- বজায় রাখতে হবে।
- চারা রোপণ
- ১. নতুন চারা না লাগিয়ে এক বছর পুরানো চারা
- লাগানো উচিত।
- ২. গর্তের মধ্যে চারা সোজাভাবে লাগাতে হবে।
- ৩. চারার শেকড় মাটি দিয়ে সম্পূর্ণ ঢেকে দিতে হবে।
- ৪. জোড় কলমের মাধ্যমে তৈরি চারার জোড়ের
- জায়গাটি মাটি থেকে অন্তত ৩-৪ সে.মি. উপরে
- রাখতে হবে।
- সার প্রয়োগ
- কৃষকদের মতে গুণগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে
- হলে গোলাপ ফুলের গাছে যতটুকু সম্ভব জৈব সার
- প্রয়োগ করতে হবে। মাটি পরীক্ষা করে মাটির ধরণ
- অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে জৈব সার
- ব্যবহার করলে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশ উভয়ই
- ভালো থাকবে। বাড়িতে গবাদি পশু থাকলে সেখান
- থেকে গোবর সংগ্রহ করা যাবে। নিজের গবাদি পশু না
- থাকলে পাড়া-প্রতিবেশি যারা গবাদি পশু পালন করে
- তাদের কাছ থেকে গোবর সংগ্রহ করা যেতে পারে।
- এছাড়া ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে আবর্জনা
- পচা সার ব্যবহার করা যেতে পারে। বাড়ির আশেপাশে
- গর্ত করে সেখানে আবর্জনা, ঝরা পাতা ইত্যাদির
- স্তুপ করে রেখে আবর্জনা পচা সার তৈরি করা
- সম্ভব।
- সেচ
- ১. চারা রোপণের পর, চারার গোড়ায় প্রাথমিক
- অবস্থায় ঘন ঘন পানি দিতে হবে।
- ২. চারা মাটিতে ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে নতুন
- ডালপালা ছাড়ার পর খরা মৌসুমে প্রতি ১০ দিন পর
- পর একবার সেচ দিলেই চলবে।
- ৩. প্রতিবার পানি সেচের পর গাছের গোড়ার মাটি
- ঝরঝরে করে দিতে হবে।
- রোগবালাই ও তার প্রতিকার
- গোলাপ ফুলের বাগানে পোকার আক্রমণ হলে
- স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন