বিজয় মুমিনদের জন্য লিখিত, এটা আল্লাহ্র ওয়াদা। আল্লাহ্ সুভহানা তায়ালা বলেন,
“এবং কিছুতেই আল্লাহ কাফেরদেরকে মুসলমানদের উপর বিজয় দান করবেন না।” [নিসা ১৪১]
তবে সে বিজয় শর্তহীন নয়, শর্ত সাপেক্ষ্য। মহান আল্লাহ্ বলেন,
“তোমরা কখনো হীনমন্যতায় ভুগবেনা ও দুঃখিতও হবেনা বরং তোমরাই হবে বিজয়ী যদি তোমরা মুমিন হও” [সুরাহ ইমরান, ১৩৯]
কে মুমিন আর কে মুমিন না আল্লাহ্ তা কিভাবে জানবেন? আল্লাহ্ তো সবার অন্তরের খবর রাখেন। তাহলে আল্লাহ্ সুভহানা তায়ালা কি অন্তরের অবস্থা বিবেচনা করেই মুমিনদের জয় পরাজয় নির্ধারিত করে দিবেন? না, তিনি তা করবেন না। বরং তিনি মুমিনদের জন্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করবেন। আল্লাহ্ পাক কোরআনে বলেন,
“তোমাদের কি ধারণা, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ এখনও দেখেননি তোমাদের মধ্যে কারা জেহাদ করেছে এবং কারা ধৈর্য্যশীল।” সুরাহ আলে ইমরান ১৪২
আল্লাহ্ সুভহানা তায়ালা জান্নাতে দাখিল করার আগে জানতে চান কে তার রাস্তায় জিহাদ করে এবং কারা দুনিয়ার প্রতিকূলতার মোকাবেলায় ধৈর্য ধারণ করেন।
এবং আল্লাহ্ সুভহানা তায়ালা এই পদ্ধতি অনুসরণ করছেন পৃথিবীর ইতিহাসের শুরু থেকেই। তিনি বলেন,
“তোমরা মনে কর যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে অথচ আল্লাহ্ এখনও তোমাদের নিকট তোমাদের পূর্ববর্তীদের অনুরূপ অবস্থা আসেনি? তাদের উপর এসেছে বিপদ ও কষ্ট আর এমনি ভাবে শিহরিত হয়েছে যাতে নবী ও তার প্রতি যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে পর্যন্ত এ কথা বলতে হয়েছে যে, কখন আসবে আল্লাহর সাহায্য। তোমরা শুনে নাও আল্লাহর সাহায্য একান্ত নিকটবর্তী।” সুরাহ বাকারাহ ২১৪
সুতারাং বিজয় মুমিনদের জন্য আল্লাহ্র পক্ষ থেকে লিখিত, এটা মুমিনদের প্রতি তার একটা ওয়াদা।
বিজয় আল্লাহ্র পক্ষ থেকেই আসবে। আমাদের অস্ত্র-সস্ত্র এর উপর বিজয় নির্ভর করবে না।
সুতারাং যারা জিহাদের জন্য অস্ত্র – সরাঞ্জাম নিয়ে চিন্তিত তাদের প্রশ্নের প্রথম জবাব- মুমিনদের বিজয় আল্লাহ্র পক্ষ থেকে আসবে যখন উনার পরীক্ষায় আমরা উত্তীর্ণ হব। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলে ভারি অস্ত্র অত্যাধুনিক মরনাস্ত্র দিয়ে মুমিনদের বিজয় আসবে না।
তাহলে কি আমরা খালি হাতে জিহাদ করব?
এ প্রসংগে আল্লাহ্ সুভহানা তায়ালা বলেন,
তোমরা বের হয়ে পড় হালকা বা ভারী সরঞ্জামের সাথে এবং জিহাদ কর আল্লাহর পথে নিজেদের মাল ও জান দিয়ে, এটি তোমাদের জন্যে অতি উত্তম, যদি তোমরা বুঝতে পার। [সুরাহ তাওবাহ, ৪১]
আমাদের যদি অত্যাধুনিক মেশিনগান আর জঙ্গি বিমান থাকে তবে আমরা অবশ্যই তাই নিয়ে যুদ্ধ করব আর যদি আমাদের পুরাতন মরিচাধরা রাইফেল আর ঘরে বানান বোমাই সম্বল হয় তবে আমরা তাই নিয়ে জিহাদ করব। ভারী অস্ত্র সরঞ্জাম না থাকলে আমরা পরাজিত হবো কাফির মুশ্রিকদের বিরুদ্ধে এরকম যারা মনে করছেন তারা এখনও বিশ্বাশ স্থাপন করতে পারেন নাই আল্লাহ্র আয়াতের উপর। উপরুন্তু ভারী অস্ত্র না থাকার অযুহাতে যদি জিহাদে যাওয়া থেকে বিরত হয়, তাহলে আল্লাহ্ কি আমাদের হাশরের ময়দানে ক্ষমা করবেন? নিশ্চয়ই নয়।
অধিক জনবল ও ভারী অস্ত্র বরং জিহাদের পথের প্রতিবন্ধক।
বদর, উহুদ যুদ্ধে মুসলিমদের সংখ্যা ছিল কম, সাজ- সরঞ্জাম ছিল অপ্রতুল কিন্তু আল্লাহ্র ইচ্ছায় তারা মুশরিকদের পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু হুনাইনের যুদ্ধে অধিক জনবল ও প্রচুর যুদ্ধ সরঞ্জাম থাকা স্বত্বেও মুসলিমদের বিপর্যয় সৃষ্টি হয়।অষ্টম হিজরীর শাওয়াল মাসে প্রায় বারো হাজার মুসলিম সৈন্য নিয়ে মুহাম্মদ (স) হুনাইনের অধিবাসী হাওয়াজেন ও সাকীফ গোত্রের মুকাবিলার জন্যে রওয়ানা হলেন। ঐ সময় মুসলমানদের সৈন্য সংখ্যা ছিলো বিপুল আর তাদের যুদ্ধ-সরঞ্জামও ছিলো প্রচুর। এটা দেখেই তাদের মনে পূর্ণ প্রত্যয় জন্মালো যে, দুশমনরা তাদের মুকাবিলা করতে কিছুতেই সমর্থ হবে না; বরং অচিরেই তারা ময়দান ছেড়ে পালিয়ে যাবে। এমন কি, কোনো কোনো মুসলমানের মুখ থেকে এ উক্তি পর্যন্ত বেরিয়ে পড়লো : ‘আজ আর আমাদের ওপর কে জয়লাভ করতে পারে কিন্তু এরূপ ধারণা মুসলমানদের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে কিছুমাত্রও সামঞ্জস্যশীল ছিল না। কারণ তাদের কখনো আপন শক্তি-সামর্থ্যের ওপর ভরসা করা উচিত নয়। তাদের শক্তি হওয়া উচিত শুধুমাত্র আল্লাহ তা’আলার দয়া ও করুণা। কুরআন পাকে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন :
‘হুনাইনের দিনকে স্মরণ করো, যখন তোমরা নিজেদের সংখ্যাধিক্যতে তুষ্ট ছিলে; কিন্তু তাতে তোমাদের কোনো কাজ হয়নি; বরং জমিন প্রশস্ত থাকা সত্ত্বেও তা তোমাদের জন্যে সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিলো এবং তোমরা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পালিয়েছিলে। অতঃপর আল্লাহ তাঁর রাসূল এবং মুসলমানদের ওপর নিজের তরফ থেকে সান্ত্বনা ও প্রশান্তির ভাবধারা নাযিল করলেন এবং তোমরা দেখতে পাওনি এমন সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করে কাফিরদের শাস্তি দিলেন। কাফিরদের জন্যে এমনি শাস্তিই নির্ধারিত।’ (সূরা তাওবাঃ ২৫,২৬)
সুতারাং এখান থেকে স্পষ্ট জানা গেল মুসলিমদের জয়ের জন্য প্রয়োজন আল্লাহ্ পাকের করুণা ও রহমত, ভারী ও আধুনিক অস্ত্র সরঞ্জাম নয়।
তাহলে কি অস্ত্র সস্ত্রের কোন দরকার নেই? আমরা কি খালি হাতে যুদ্ধ করব? আর আল্লাহ্র গায়েবী মদদে আমরা অলৌকিক ভাবে বিজয়ী হয়ে যাব?
অবশ্যই যুদ্ধ সরঞ্জাম আমাদেরকে প্রস্তুত করতে হবে। যথা সাধ্য চেষ্টা করতে হবে সরবচ্চ প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য। আমরা যদি প্রস্তুতি নিতে অবহেলা করি তাহলে আল্লহর সাহায্য পাওয়া পরের কথা, এজন্যে আমাদের আল্লাহ্র কাছে জবাব্দিহি করতে হবে। মহান রব্বুল আলামিন বলেন,“সত্যিই যদি তারা (আল্লাহর প্রথে জিহাদে) বের হতে চাইত, তারা এর জন্য কিছু না কিছু প্রস্তুতি নিত” –সুরা তাওবাঃ ৪৬
সুতারাং জিহাদের প্রস্তুতি নেওয়া প্রত্যেকের উপর ফরয দায়িত্ব। এবং এক্ষেত্রে কোন অবেহেলা বা হেলাফেলার জন্যে রয়েছে কঠিন শাস্তি।
তাহলে এখন বাংলাদেশে কিভাবে অস্ত্র সস্ত্র পাওয়া সম্ভব?
বাংলাদেশে অস্ত্র কিভাবে পাওয়া সম্ভব সেটা জানার আগে আমরা জানি বর্তমানে যে সমস্ত মারেকাতে জিহাদ চলছে তারা কিভাবে অস্ত্র পেয়েছে?
বর্তমানে আফগানিস্থান কে বলা হয় “দ্যা ল্যান্ড ওফ জিহাদ”। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত আফগানিস্থানে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে মুজাহিদরা প্রচুর অস্ত্র কিনে, এবং পাকিস্তান সৌদি আরব সহ বিভিন্ন দেশ থেকে অস্ত্র সাহায্য পায়। যুদ্ধে শেষে তা বিভিন্ন ছোট বড় মিলিশীয়া বাহিনী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের কাছে অস্ত্র ছরিয়ে পরে। মোল্লা মুহাম্মদ উমর হাফিজুল্লাহ এরকমই কিছু অস্ত্র ধার করে প্রথম কান্দাহারে যুদ্ধের সূচনা করেন। পরবর্তীতে অনেকে তালিবানদের অস্ত্র দান করেন, আর বাকি অংশ তারা অন্যান্য মিলিশিয়ার কাছ থেকে জবর দখল করেন।
বর্তমানে ন্যাটোর বিরুদ্ধে যুদ্ধে মুজাহিদদের প্রধান অস্ত্র কৃষি জমিতে ব্যবহিত সার থেকে প্রস্তুত করা আইইডি (IED)। নাইট্রেট সার থেকে প্রস্তুত করা এই বোমা আমেরিকা ও তার মিত্রদের জন্য এখন সবচেয়ে বড় আতঙ্ক। আর মুজাহিদরা নিজেরাই ঘরে লোহা থেকে এমুনিউশন বানায়।
২০০৩ সালে সাদ্দাম হোসেন যখন আমেরিকার আক্রমণের মুখে পিছু হটা শুরু করল তখন সে তার অস্ত্রের ভান্ডার খুলে দিল যে কারও জন্য যে আমেরিকার বিরুদ্ধে এই অস্ত্র ব্যবহার করতে চাই। মুজাহিদরা সেখান থেকে অনেক অস্ত্র মজুদ করেছিল এবং কিছু অংশ ইয়েমেন, আফ্রিকাতে পাঠিয়েছিল।
বর্তমান বিশ্বে প্রতি বছর ৬০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কেনা বেচা হয় ব্ল্যাক মার্কেটে। সুতারাং অর্থ থাকলে অস্ত্র ক্রয় কোন সমস্যা নয়। ব্ল্যাক মার্কেট থেকে অস্ত্র কেনা মুজাহিদদের অস্ত্রের অন্যতম উৎস।
গণিমত হচ্ছে এখন পর্যন্ত মুজাহিদদের অস্ত্রের সবচেয়ে বড় উৎস। শত্রু পক্ষকে পরাজিত করে তাদের অস্ত্র জবর দখল করে নেওয়া মাধ্যমে মুজাহিদরা এখন অস্ত্রের মজুদ গড়ে তুলেছে।
মোট কথা হচ্ছে, অস্ত্রের অভাব পৃথিবীর কোথাও জিহাদের প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায় নি। ইনশাল্লাহ বাংলাদেশে বা পৃথিবীর যে কোন জায়গায় যারা যুদ্ধ করতে চাই তাদের কারও অস্ত্রের অভাবে জিহাদ থেমে থাকবে না।বাংলাদেশেও যে ব্ল্যাক মার্কেটে অস্ত্র আনা সম্ভব তার প্রমাণ আসামের উলফার দশ ট্র্যাক অস্ত্র। আর বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ, এখানে নাইট্রেট সারের কোন অভাব নেই। আর জিহাদ একবার শুরু হলে শত্রু পক্ষের অস্ত্র সরঞ্জাম দখলের মাধ্যমে অস্ত্র ভান্ডার আরও সমৃদ্ধ হবে ইনশাল্লাহ।
সুতারাং অস্ত্র- সরঞ্জাম জিহাদের পথে কোন প্রতিবন্ধকতা নয়, প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে আমাদের ইমান। আমরা যদি ইমানদার হয়, ধৈর্যশীল হয়- ইনশাল্লাহ আমরাই বিজয়ী হব।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন