ছাত্রলীগ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
ছাত্রলীগ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শনিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৫

রাজধানীর ভাটারায় হামলা বোমাবাজির পর গ্রেপ্তার ২ ছাত্রলীগ নেতা

গতকাল রাতে রাজধানীর ভাটারার জগন্নাথপুর এলাকায় গ্রেপ্তার দুই ছাত্রলীগ নেতা। ছবি : কালের কণ্ঠ
অ- অ অ+

রাজধানীর ভাটারায় দলবল নিয়ে হামলা ও বোমাবাজির পর ছাত্রলীগের দুই নেতাকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী। তাঁদের কাছ থেকে চাপাতিসহ দেশি কিছু অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে ভাটারার জগন্নাথপুর আজিজ সড়ক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এরপর এলাকার ব্যবসায়ী ও লোকজন বিক্ষোভ করেছে। তাদের অভিযোগ, একটি হোটেলের মালিকের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা চেয়ে না পেয়ে ছাত্রলীগের এই দুই নেতা লোকজন নিয়ে ওই হোটেল ও এলাকার বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন ১৭ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি মাহমুদুল হাসান অঞ্জন ও সাবেক সভাপতি জিয়াউল হক জিয়া।

ভাটারা থানার ওসি নূরুল মুত্তাকিন দুজনকে গ্রেপ্তার ও দেশি অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিসমিল্লাহ নামের খাবার হোটেলটির মালিক বিলায়েত হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, গত রবিবার রাত ১০টার দিকে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল হাসান অঞ্জন ও জিয়াউল হক জিয়ার নেতৃত্বে কমপক্ষে ৩০ জন তাঁর হোটেলে এসে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। তিনি টাকা দিতে না চাইলে পরের দিন আসবে বলে হুমকি দিয়ে চলে যায় তারা। এরপর গত সোমবার তাদের পক্ষে উঠতি বয়সী সাত-আটজন কিশোর এসে তাঁর কাছে আবার ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা না দেওয়ায় কিশোররা তাঁকে মারধর করে। তখন তাঁর চিত্কারে স্থানীয় লোকজন এসে ওই কিশোরদের আটক করে। পরে তাদের স্থানীয় বাড়ি মালিক সমিতি 'জগন্নাথপুর সোসাইটির' কার্যালয়ে নিয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে বিচার বসে। পরে মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

মালিক সমিতির সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, গতকাল রাত পৌনে ৮টার দিকে ছাত্রলীগ নেতা অঞ্জন ও জিয়ার নেতৃত্বে প্রায় দুই শতাধিক লোকজন মিছিল করে 'জয় বাংলা' স্লোগান দিয়ে বিসমিল্লাহ হোটেলসহ এলাকার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। তারা বাড়ি মালিক সমিতির কার্যালয়েও হামলা চালায়। পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকলে মসজিদের মাইক থেকে হামলার বিষয়টি এলাকাবাসীকে জানানো হয়। এরপর  স্থানীয় লোকজন হামলাকারীদের আটক করার চেষ্টা করে। তখন হামলাকারীরা ককটেল ফাটিয়ে পিছু হটে। কিন্তু ধরা পড়ে যান অঞ্জন ও জিয়া। পরে পুলিশ ডেকে তাঁদের তুলে দেওয়া হয়।

গতকাল রাত সোয়া ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় লোকজন জড়ো হয়ে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, গ্রেপ্তারকৃত জিয়া ও অঞ্জন বিএনপির সময় ছাত্রদল করত। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাঁরা ছাত্রলীগের নেতা হয়েছে।

বুধবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৫

ধর্ষণের অভিযোগে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের তালতলায় বাসায় আটকে রেখে কিশোরী গৃহকর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার স্থানীয় এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আজ বুধবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় গৃহকর্মীর বাবা বাদী হয়ে মামলাটি করেন।


গৃহকর্মীর পরিবার জানায়, ওই কিশোরীর বাড়ি লক্ষ্মীপুরে। সম্প্রতি লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চরবংশী ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক শাহজালাল তাঁর ঢাকার বাসায় ওই কিশোরীকে গৃহকর্মী হিসেবে নিয়ে আসেন। যুবলীগ নেতার স্ত্রী চাকরি করেন বলে বেশ কিছুটা সময় বাইরে থাকতেন। এ সুযোগে শাহজালাল তাকে বাসায় জিম্মি করে ভয়ভীতি দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। এক পর্যায়ে ওই কিশোরী অসুস্থ হয়ে পড়লে গত শনিবার শাহজালাল তাকে বাড়ি থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে চাঁদপুরে নিয়ে গিয়ে এক স্থানে ফেলে পালিয়ে যান। পরে ওই কিশোরী লক্ষ্মীপুরে বাড়ি ফিরে পরিবারের সদস্যদের এ ঘটনা জানায়।

ওই কিশোরীর পরিবারের অভিযোগ, এ ব্যাপারে রায়পুর থানায় মামলা করতে গেলে মামলা নেওয়া হয়নি। থানা থেকে বলা হয়, ঘটনাস্থল ঢাকা হওয়ায় সেখানকার সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করতে হবে। এরপর গৃহকর্মীকে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু পুলিশের অনুমতি নেই বলে গৃহকর্মীকে ভর্তি করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ষণ ও পরবর্তী ঘটনা জানিয়ে লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়।

লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ সুপার শাহ মিজান সাফিউর রহমান আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন। রায়পুর থানার পক্ষ থেকে বিষয়টি রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় জানানো হয়। রায়পুর থানার তত্ত্বাবধানে গৃহকর্মীর পরিবারকে শেরেবাংলা নগর থানায় পাঠানো হয়। আজ সকালে গৃহকর্মীর বাবা এ থানায় শাহজালালকে আসামি করে মামলা করেন।

মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে শেরেবাংলা নগর থানার ওসি জি জি বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

আজ সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে যোগাযোগ করা হলে যুবলীগ নেতা শাহজালালের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে গত সোমবার তিনি ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করে প্রথম আলোর কাছে দাবি করেছিলেন, রাজনীতি করার কারণে একটি চক্র তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নিপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ওই কিশোরী আজ ঢাকা মহানগর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা হয়েছে। বর্তমানে ওই কিশোরীকে তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়েছে। আগামীকাল বয়স নির্ধারণের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তাকে আবার ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হবে।

সরকারদলীয়দের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তথ্য পায় না দুদক


পাঁচ বছরে দুদকের কৌশলী পদক্ষেপে সরকারি দলের দুই শতাধিক রাজনীতিবিদ ও সরকার-সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালী ব্যক্তি দুর্নীতির মামলা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তাঁদের সবার বিরুদ্ধে এক-এগারোর সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অভিযোগ আনা হয়েছিল। তবে বিরোধী দলের রাজনীতিবিদেরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মামলা থেকে রেহাই পাননি।
ওই সময়ে আরও কয়েক হাজার প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুদকে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়লেও অনুসন্ধান পর্যায়ে নথিভুক্ত (মামলার জন্য উপযুক্ত নয়) এবং মামলা করার পর চূড়ান্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে অব্যাহতিপত্র দেওয়া হয়েছে। কমিশনের ভাষায় ‘অভিযোগের আমলযোগ্য তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ার কারণে’ তাঁরা অব্যাহতি পেয়েছেন।
তবে দুদকের চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পেলে দুদক কাউকেই ছাড় দেয় না। কোনো চাপের কাছে নতিস্বীকার করে না। অনুসন্ধানের সময় আদালতে উপস্থাপন করার মতো তথ্য না পেলে অভিযোগটি নথিভুক্ত করে কমিশন। আর তদন্তে কোনো অভিযোগের প্রমাণ না পাওয়া গেলে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়।
দুদক সূত্র জানায়, ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক’ বিবেচনায় মামলা প্রত্যাহারের জন্য ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার কয়েকবারে ৩৩৭ জনের তালিকা পাঠায় দুদকে। তাঁদের সবাই সরকারদলীয় নেতা কিংবা সরকার-সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালী ব্যক্তি। কিন্তু দুদক আইনে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বিবেচনা করে মামলা প্রত্যাহারের সুযোগ না থাকায় ভিন্ন কৌশলে তাঁদের দায়মুক্তি দেওয়া হয়। তদন্তে অভিযোগের ‘সত্যতা’ না পাওয়ায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া, ‘মানবিক বিবেচনা’য় আপিল না করা এবং আপিলের পর উচ্চ আদালতে উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজের আবেদন করা—এ তিন পদ্ধতিতে মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হয়।
কিন্তু গত ১২ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের একটি বেঞ্চ হাজি সেলিমের দুর্নীতির মামলা শেষ মুহূর্তে না চালানোর জন্য দুদকের সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। প্রধান বিচারপতি ওই আদেশে বলেন, শুনানিকালে এভাবে খারিজের আবেদন করা বা মামলা না চালানোর সিদ্ধান্ত নিলে আদালত বিভ্রান্ত হন। হাজি সেলিমের এই মামলায় ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট রায় দিয়েছিলেন। রায়ে নিম্ন আদালতের দেওয়া ১৩ বছরের দণ্ড বাতিল হয়।
দুদকের প্যানেল আইনজীবী খুরশিদ আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, যে আইনি ব্যাখ্যার ভিত্তিতে আপিল বিভাগ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা খুবই স্পষ্ট। তাই একই ধরনের কোনো মামলা না চালানোর সিদ্ধান্ত নিতে আপিল বিভাগ নিরুৎসাহিত করেছেন।
সরকারি দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এভাবে একের পর এক ছাড় পেয়ে গেলেও বিরোধী রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান বা তদন্তে খুবই কঠোর অবস্থানে দুদক। এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমদকে দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে ’৯৬ সালের একটি নোটিশের ধারাবাহিকতায় সম্পদ বিবরণী দিতে হয়েছে দুদকে। গত বছর হিসাব বিবরণী দিতে দুদকে এসে অলি আহমদ সাংবাদিকদের কাছে বলেন, মন্ত্রিত্ব গ্রহণ না করার খেসারত হিসেবে তাঁকে দুদকে আসতে হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ ও তাঁর প্রবাসী ভাই মঞ্জুর আহমদ, বিএনপির নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা, সাবেক স্পিকার জমিরউদ্দিন সরকার, এম মোরশেদ খান, আলী আসগার লবি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা, মোসাদ্দেক আলী ফালু, এহছানুল হক, এ কে এম মোশাররফ হোসেন, ইকবাল হাসান মাহমুদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা দুদকের মামলায় লড়ছেন।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তাঁর ছেলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দুদকের একাধিক মামলা চলছে। তবে খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির একটি অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় দুদক। আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের মামলা পরিচালনার সময় সিঙ্গাপুর থেকে পাচার করা অর্থ ফেরত এনেছে দুদক।
দুদকে আসা অভিযোগ ও অনুসন্ধানের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০০৭ সাল থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন লাখের বেশি অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে প্রায় ২২ হাজার অভিযোগের অনুসন্ধান হয়। বাকি অভিযোগগুলো দুদকের তফসিলভুক্ত না হওয়ায় অনুসন্ধানের জন্য বিবেচনা করা হয়নি। ২২ হাজার অভিযোগ অনুসন্ধানের পর প্রায় চার হাজার মামলা করা হয়। অভিযোগের ‘সত্যতা’ না পাওয়ায় নথিভুক্ত করা হয় প্রায় ১৮ হাজার অভিযোগ। এর মাধ্যমে ১৮ হাজার ৩৯ জন দুদকের অব্যাহতিপত্র পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও ব্যবসায়ী ৬৯৭ জন, বিভিন্নভাবে সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তি ১৫ হাজার ১১ জন এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন অন্তত তিন হাজার।
অন্যদিকে এ সময়ে করা মামলাগুলোর মধ্যে ১ হাজার ১৩১টির অভিযোগপত্র দেওয়া হয় আদালতে। অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় ২ হাজার ৮৬৭টি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে ৩ হাজার ২২ আসামিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে সরকারদলীয় নেতা-কর্মী ও ব্যবসায়ী রয়েছেন ৮৬১ জন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাপক হারে দায়মুক্তির কারণে এ প্রশ্ন ওঠা খুবই স্বাভাবিক যে দুদক বাস্তবেই রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপের ঊর্ধ্বে উঠে পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে কি না।
অভিযোগ থেকে দায়মুক্তির ঘটনাগুলো খতিয়ে দেখা গেছে, অনেক ঘটনায় দৃশ্যমান প্রমাণ থাকলেও দুদকের কর্মকর্তারা এর কোনো প্রমাণ পাননি। নির্বাচন কমিশনে নিজেদের দেওয়া হলফনামায় আর্থিক অনিয়মের প্রমাণ থাকলেও ‘ভুল হয়েছে’ অজুহাত গ্রহণ করে অনেককে দায়মুক্তি দিয়েছে দুদক। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বেশ জোরালো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আলোচিত অনেক ব্যক্তিত্ব রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দায়মুক্তি পেয়েছেন বলে কথিত রয়েছে।
নবম জাতীয় সংসদের হলফনামা নিয়ে দুদকের অনুসন্ধান শেষে হলফনামায় তথ্য দিতে ‘ভুল হয়েছে’ যুক্তি গ্রহণ করে আ ফ ম রুহুল হক ও আসলামুল হককে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় সংস্থাটি। সরকারদলীয় সাংসদ এনামুল হকের বিরুদ্ধে ২১৩ কোটি টাকারও বেশি সম্পদ গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে অনুসন্ধান কর্মকর্তা মামলার সুপারিশ করলেও তাঁকে অব্যাহতি দেয় কমিশন। তবে সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান, সাংসদ আবদুর রহমান বদি, বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দীন চৌধুরী ও সাতক্ষীরার সাবেক সাংসদ আবদুল জব্বারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।
মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বন্ধুদের সম্মাননা দেওয়ার সময় ক্রেস্টের সোনা জালিয়াতির অনুসন্ধানের কাজ শুরু হলেও দীর্ঘদিনেও এ বিষয়ে তেমন অগ্রগতি নেই।
রেলওয়ের দুর্নীতির কালো বিড়াল ধরার ঘোষণা দিলেও দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হওয়ার অভিযোগ ওঠে সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তর বিরুদ্ধে। কিন্তু ঘুষের তথ্য ফাঁসকারী ইউসুফ আলী মৃধার গাড়িচালক মো. আলী আযম প্রকাশ্যে সাক্ষ্য দিতে না আসায় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তর বিরুদ্ধে অভিযোগ নথিভুক্ত করে তাঁকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়। এ ঘটনার পর রেলওয়ের নিয়োগ-দুর্নীতির অভিযোগে ১৩টি মামলা করে দুদক। ওই সব মামলার প্রধান আসামি ইউসুফ আলী মৃধাকে চূড়ান্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে ছয়টি মামলার অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
বহুল আলোচিত হল-মার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ উঠলেও মামলায় তাঁকে আসামি করেনি দুদক। দায়মুক্তি দেয় অনুসন্ধান পর্যায়েই। সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকেও মামলায় আনা হয়নি। বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনায় ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চু ও ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সংশ্লিষ্টতার তথ্য থাকলেও দুদকের করা ৫৬টি মামলার একটিতেও আবদুল হাই বাচ্চু বা পর্ষদের কাউকে আসামি করা হয়নি।
পেট্রোবাংলায় নিয়োগ-দুর্নীতির অভিযোগে সংস্থার সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক হোসেন মনসুরের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করে প্রতিবেদন দেওয়া হলেও মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের আগের মেয়াদে ৪০৩টি হজ এজেন্সিকে লাইসেন্স দেওয়ার ঘটনায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শাহজাহান মিয়ার বিরুদ্ধে কোনো অনুসন্ধান চালায়নি দুদক। অথচ প্রতিমন্ত্রীর এপিএস সৌমেন্দ্র লাল চন্দর বিরুদ্ধে মামলা হয়।
এ ছাড়াও বিভিন্ন ঘটনায় সাম্প্রতিক সময়ে দায়মুক্তি পেয়েছেন ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তাসহ অনেকে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাংসদ হাজি সেলিম, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন, ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান, আনন্দ শিপইয়ার্ডের মালিক আবদুল্লাহিল বারী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল হুদা, ইউসিবিএলের এমডি মুহাম্মদ আলী, সোনালী ব্যাংকের সিবিএর সাধারণ সম্পাদক হাসান খসরু, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইউনুছুর রহমান, পুলিশের ডিআইজি (এসবি) মো. রফিকুল ইসলাম, এসপি মিজানুর রহমান প্রমুখ।