শিবির লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
শিবির লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১৬

সর্বোচ্চ ত্যাগের মানসিকতা নিয়ে ইসলামী আন্দোলনকে কাঙ্খিত মঞ্জিলে নিয়ে যেতে হবে

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের নব নির্বাচিত কেন্দ্রীয় সভাপতি আতিকুর রহমান বলেন, আওয়ামী অপশাসনে সারাদেশ আজ কারাগারে পরিণত হয়েছে। নতুন বছরে কারারুদ্ধ দেশবাসীকে মুক্ত করার লড়াই চলবে। যৌথবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও দলীয় সন্ত্রাসী দিয়ে সারাদেশে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের রক্তে রঞ্জিত করা হচ্ছে। কিন্তু ছাত্রশিবির নেতাকর্মীরা জীবন দিয়েছে, সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে কিন্তু বাতিলের সামনে মাথা নত করেনি।

তিনি ছাত্রশিবিরের ২০১৬ সালের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচনত্তর বৈঠকে এসব কথা বলেন। এসময় সদ্য বিদায়ী কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল জব্বার, নব মনোনিত সেক্রেটারী জেনারেল ইয়াছিন আরাফাত, সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সেলিম উদ্দিন, মতিউর রহমান আকন্দ, নূরুল ইসলাম বুলবুল এবং কার্যকরী পরিষদের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

শিবির সভাপতি বলেন, আজকের কার্যকরী পরিষদের সমাপনী অধিবেশন যখন করছি তখন কারা প্রকোষ্টে দিন যাপন করছেন সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, মো. দেলাওয়ার হোসেনসহ হাজার হাজার নেতাকর্মী। যাদের অনেকের উপর গ্রেফতারের পর থেকেই অমানুসিক নির্যাতন করা হয়েছে। জালিম সরকার মনে করেছিল ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের আটকে রেখে এই সংগঠনের কাজকে দমাতে পারবে। কিন্তু তাদের সে ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ছাত্রশিবিরের লাখো নেতাকর্মী সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।

সদ্য বিদায়ী কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল জব্বার বলেন, ত্যাগ কুরবানী ইসলামী আন্দোলনে খুব স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হয়ে যে নজির স্থাপন করেছে তা বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সুচনা করেছে। শাহাদাতের তামান্না বুকে ধারণ করে ইসলামী আন্দোলনকে কাঙ্খিত মঞ্জিলে নিয়ে যেতে হবে। একই সাথে ঈমানী মজবুতি নিয়ে ময়দানে অতীতের মত জোরালো ভূমিকা পালন করে যেতে হবে।

সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মতিউর রহমান আকন্দ শাহাদাতবরণকারী ও নির্যাতিত নেতাকর্মীদের কথা স্মরণ করে বলেন, ছাত্রশিবির নেতাকর্মীরা নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়ে, শত নির্যাতন সয়ে অপশাসন বিরোধী আন্দোলনে মাইলষ্টোন রচনা করেছেন। শহীদ ভাইয়েরা যে প্রেরণায় আমাদের উজ্জীবিত করে গেছেন, সেই প্রেরণাকে বুকে নিয়ে আমরা সামনের সকল বাঁধা মাড়িয়ে যাব। ইসলাম ও দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে ছাত্রশিবিরই বাংলাদেশকে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিবে। তরুন প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে ছাত্রশিবিরই জাতির মুক্তি আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবে। শত বাধা আর নির্যাতনের পরও তরুন প্রজন্ম ছাত্রশিবিরকেই মেধা বিকাশ, চরিত্র গঠন ও নেতৃত্বের জন্য গাইডলাইন হিসেবে গ্রহণ করেছে।

সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, অসংখ্য ভাইয়ের শাহাদাতে আজ বাংলাদেশের যমীন কথা বলতে শুরু করেছে। ছাত্রশিবির আজ বাংলাদেশের প্রতিটি পরিবারে পৌছে গেছে। অগণিত ভাইয়েরা নিজের জীবন দিয়ে ছাত্রশিবিরকে যে উচ্চতায় তুলে ধরেছেন, ত্যাগের বিনিময়েই নেতাকর্মীদের সে অবস্থান ধরে রাখতে হবে। আদর্শের দাওয়াত দেশের সকল শ্রেণী পেশার মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। নিত্য নতুন কৌশল আর প্রজ্ঞাকে কাজে লাগিয়ে কর্মসূচি পালন করতে হবে।

শনিবার, ৯ জানুয়ারী, ২০১৬

ইসলাম এর দৃষ্টিতে বাসর রাত কেমন

১- বাসরঘরে স্ত্রীর মাথার অগ্রভাগে ডান হাত রাখা এবং দু’আ পড়া :

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

إِذَا أَفَادَ أَحَدُكُمُ امْرَأَةً أَوْ خَادِمًا أَوْ دَابَّةً فَلْيَأْخُذْ بِنَاصِيَتِهَا وَلْيُسَمِّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ وَلْيَقُلِ اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا جُبِلَتْ عَلَيْهِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا جُبِلَتْ عَلَيْهِ.

‘তোমাদের কেউ যখন কোনো নারী, ভৃত্য বা বাহন থেকে উপকৃত হয় (বিয়েবা খরিদ করে) তবে সে যেন তার মাথার অগ্রভাগ ধরে, বিসমিল্লাহ পড়ে এবং বলে :

اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا جُبِلَتْ عَلَيْهِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا جُبِلَتْ عَلَيْهِ.

(‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে এর ও এর স্বভাবের কল্যাণ প্রার্থনা করছি এবং এর ও এর স্বভাবের অকল্যাণ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।)’

২- স্বামী-স্ত্রী উভয়ে একসঙ্গে দুই রাকা‌‘‌ত সালাত আদায় করা:

আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, স্ত্রী যখন স্বামীর কাছে যাবে, স্বামী তখন দাঁড়িয়ে যাবে। আর স্ত্রীও দাঁড়িয়ে যাবে তার পেছনে। অতপর তারা একসঙ্গে দুইরাকা‌‘‌ত সালাত আদায় করবে এবং বলবে :

اللَّهُمَّ بَارِكْ لِي فِي أَهْلِي، وَبَارِكْ لَهُمْ فِيَّ، اللَّهُمَّ ارْزُقْنِي مِنْهُمْ وَارْزُقْهُمْ مِنِّي، اللَّهُمَّ اجْمَعَ بَيْنَنَا مَا جَمَعْتَ إِلَى خَيْرٍ، وَفَرِّقْ بَيْنَنَا إِذَا فَرَّقْتَ إِلَى خَيْرٍ.

‘হে আল্লাহ, আপনি আমার জন্য আমার পরিবারে বরকত দিন আর আমার ভেতরেও বরকত দিন পরিবারের জন্য। আয় আল্লাহ, আপনি তাদের থেকে আমাকে রিযক দিন আর আমার থেকে তাদেরও রিযক দিন। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের যতদিন একত্রে রাখেন কল্যাণেই একত্র রাখুনআর আমাদের মাঝে যখন বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দেবেন তখন কল্যাণের পথেই বিচ্ছেদ ঘটাবেন।’

৩- স্ত্রীর সঙ্গে সহবাসের দু‘আ পড়া।

স্ত্রী সহবাসকালে নিচের দু’আ পড়া সুন্নত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

لَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا أَرَادَ أَنْ يَأْتِيَ أَهْلَهُ فَقَالَ بِاسْمِ اللهِ اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا ، فَإِنَّهُ إِنْ يُقَدَّرْ بَيْنَهُمَا وَلَدٌ فِي ذَلِكَ لَمْ يَضُرُّهُ شَيْطَانٌ أَبَدًا.

‘তোমাদের কেউ যদি স্ত্রীসঙ্গমকালে বলে :

بِاسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا

(আল্লাহর নামে শুরু করছি, হে আল্লাহ, আমাদেরকে শয়তানের কাছ থেকে দূরে রাখুন আর আমাদের যা দান করেন তা থেকে দূরে রাখুন শয়তানকে।) তবে সে মিলনে কোনো সন্তান দান করা হলে শয়তান কখনো তার ক্ষতি করতে পারবে না।’

৪- নিষিদ্ধ সময় ও জায়গা থেকে বিরত থাকা :

আবূ হুরাইরা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

مَنْ أَتَى حَائِضًا ، أَوْ امْرَأَةً فِي دُبُرِهَا ، أَوْ كَاهِنًا فَصَدَّقَهُ بِمَا يَقُولُ ، فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ عَلَى مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

‘যে ব্যক্তি কোনো ঋতুবতী মহিলার সঙ্গে কিংবা স্ত্রীর পেছন পথে সঙ্গম করে অথবা গণকের কাছে যায় এবং তার কথায় বিশ্বাস স্থাপন করে, সে যেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি যা অবতীর্ণহয়েছে তা অস্বীকার করলো।’

৫- ঘুমানোর আগে অযূ বা গোসল করা :

স্ত্রী সহবাসের পর সুন্নত হলো অযূ বা গোসল করে তবেই ঘুমানো। অবশ্য গোসল করাই উত্তম। আম্মার বিন ইয়াসার রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

ثَلاَثَةٌ لاَ تَقْرَبُهُمُ الْمَلاَئِكَةُ جِيفَةُ الْكَافِرِ وَالْمُتَضَمِّخُ بِالْخَلُوقِ وَالْجُنُبُ إِلاَّ أَنْ يَتَوَضَّأَ.

‘তিন ব্যক্তির কাছে ফেরেশতা আসে না : কাফের ব্যক্তির লাশ, জাফরান ব্যবহারকারী এবং অপবিত্র শরীর বিশিষ্ট ব্যক্তি, যতক্ষণ না সে অযূ করে।’

৬- ঋতুবতীর স্ত্রীর সঙ্গে যা কিছুর অনুমতি রয়েছে :

হ্যা, স্বামীর জন্য ঋতুবতী স্ত্রীর সঙ্গে যোনি ব্যবহার ছাড়া অন্য সব আচরণের অনুমতি রয়েছে। স্ত্রী পবিত্র হবার পর গোসল করলে তার সঙ্গে সবকিছুই বৈধ। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

اصْنَعُوا كُلَّ شَيْءٍ إِلاَّ النِّكَاحَ .

‘ৃ সবই করতে পারবে কেবল সঙ্গম ছাড়া।’

৭- বিয়ের নিয়ত শুদ্ধ করা :

নারী-পুরুষের উভয়ের উচিত বিয়ের মাধ্যমে নিজকে হারামে লিপ্ত হওয়া থেকে বাঁচানোর নিয়ত করা। তাহলে উভয়ে এর দ্বারা ছাদাকার ছাওয়াব লাভ করবে।কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

وَفِي بُضْعِ أَحَدِكُمْ صَدَقَةً ، قَالُوا : يَا رَسُولَ اللهِ ، أَيَأْتِي أَحَدُنَا شَهْوَتَهُ ، وَيَكُونُ لَهُ فِيهِ أَجْرٌ ؟ قَالَ : أَرأَيْتُمْ لَوْ وَضَعَهَا فِي الْحَرَامِ أَكَانَ عَلَيْهِ فِيهَا وِزْرٌ ؟ فَكَذَلَكَ إِذا وَضَعَهَا فِي الْحَلالِ كَانَ لَهُ فِيهَا أَجْرٌ.

‘তোমাদের সবার স্ত্রীর যোনিতেও রয়েছে ছাদাকা। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমাদের কেউ কি তার জৈবিক চাহিদা মেটাবে আর তার জন্য সে কি নেকী লাভ করবে? তিনি বললেন, ‘তোমরা কি মনে করো যদি সে ওই চাহিদা হারাম উপায়ে মেটাতো তাহলে তার জন্য কোনো গুনাহ হত না? (অবশ্যই হতো) অতএব তেমনি সে যখন তা হালাল উপায়ে মেটায়, তার জন্য নেকী লেখা হয়।’

৮- স্ত্রী সান্নিধ্যের গোপন তথ্য প্রকাশ না করা :

বিবাহিত ব্যক্তির আরেকটি কর্তব্য হলো স্ত্রী সংসর্গের গোপন তথ্য কারো কাছে প্রকাশ না করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

إِنَّ مِنْ أَشَرِّ النَّاسِ عِنْدَ اللَّهِ مَنْزِلَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ الرَّجُلَ يُفْضِى إِلَى امْرَأَتِهِ وَتُفْضِى إِلَيْهِ ثُمَّ يَنْشُرُ سِرَّهَا.

‘কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে ওই ব্যক্তি সবচে নিকৃষ্ট বলে গণ্য হবে যে তার স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হয় এবং স্ত্রী তার ঘনিষ্ঠ হয় অতপর সে এর গোপন বিষয় প্রচার করে।’

বুধবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৫

ধর্ষণের অভিযোগে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের তালতলায় বাসায় আটকে রেখে কিশোরী গৃহকর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার স্থানীয় এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আজ বুধবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় গৃহকর্মীর বাবা বাদী হয়ে মামলাটি করেন।


গৃহকর্মীর পরিবার জানায়, ওই কিশোরীর বাড়ি লক্ষ্মীপুরে। সম্প্রতি লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চরবংশী ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক শাহজালাল তাঁর ঢাকার বাসায় ওই কিশোরীকে গৃহকর্মী হিসেবে নিয়ে আসেন। যুবলীগ নেতার স্ত্রী চাকরি করেন বলে বেশ কিছুটা সময় বাইরে থাকতেন। এ সুযোগে শাহজালাল তাকে বাসায় জিম্মি করে ভয়ভীতি দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। এক পর্যায়ে ওই কিশোরী অসুস্থ হয়ে পড়লে গত শনিবার শাহজালাল তাকে বাড়ি থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে চাঁদপুরে নিয়ে গিয়ে এক স্থানে ফেলে পালিয়ে যান। পরে ওই কিশোরী লক্ষ্মীপুরে বাড়ি ফিরে পরিবারের সদস্যদের এ ঘটনা জানায়।

ওই কিশোরীর পরিবারের অভিযোগ, এ ব্যাপারে রায়পুর থানায় মামলা করতে গেলে মামলা নেওয়া হয়নি। থানা থেকে বলা হয়, ঘটনাস্থল ঢাকা হওয়ায় সেখানকার সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করতে হবে। এরপর গৃহকর্মীকে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু পুলিশের অনুমতি নেই বলে গৃহকর্মীকে ভর্তি করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ষণ ও পরবর্তী ঘটনা জানিয়ে লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়।

লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ সুপার শাহ মিজান সাফিউর রহমান আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন। রায়পুর থানার পক্ষ থেকে বিষয়টি রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় জানানো হয়। রায়পুর থানার তত্ত্বাবধানে গৃহকর্মীর পরিবারকে শেরেবাংলা নগর থানায় পাঠানো হয়। আজ সকালে গৃহকর্মীর বাবা এ থানায় শাহজালালকে আসামি করে মামলা করেন।

মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে শেরেবাংলা নগর থানার ওসি জি জি বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

আজ সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে যোগাযোগ করা হলে যুবলীগ নেতা শাহজালালের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে গত সোমবার তিনি ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করে প্রথম আলোর কাছে দাবি করেছিলেন, রাজনীতি করার কারণে একটি চক্র তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নিপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ওই কিশোরী আজ ঢাকা মহানগর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা হয়েছে। বর্তমানে ওই কিশোরীকে তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়েছে। আগামীকাল বয়স নির্ধারণের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তাকে আবার ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হবে।

সরকারদলীয়দের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তথ্য পায় না দুদক


পাঁচ বছরে দুদকের কৌশলী পদক্ষেপে সরকারি দলের দুই শতাধিক রাজনীতিবিদ ও সরকার-সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালী ব্যক্তি দুর্নীতির মামলা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তাঁদের সবার বিরুদ্ধে এক-এগারোর সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অভিযোগ আনা হয়েছিল। তবে বিরোধী দলের রাজনীতিবিদেরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মামলা থেকে রেহাই পাননি।
ওই সময়ে আরও কয়েক হাজার প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুদকে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়লেও অনুসন্ধান পর্যায়ে নথিভুক্ত (মামলার জন্য উপযুক্ত নয়) এবং মামলা করার পর চূড়ান্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে অব্যাহতিপত্র দেওয়া হয়েছে। কমিশনের ভাষায় ‘অভিযোগের আমলযোগ্য তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ার কারণে’ তাঁরা অব্যাহতি পেয়েছেন।
তবে দুদকের চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পেলে দুদক কাউকেই ছাড় দেয় না। কোনো চাপের কাছে নতিস্বীকার করে না। অনুসন্ধানের সময় আদালতে উপস্থাপন করার মতো তথ্য না পেলে অভিযোগটি নথিভুক্ত করে কমিশন। আর তদন্তে কোনো অভিযোগের প্রমাণ না পাওয়া গেলে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়।
দুদক সূত্র জানায়, ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক’ বিবেচনায় মামলা প্রত্যাহারের জন্য ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার কয়েকবারে ৩৩৭ জনের তালিকা পাঠায় দুদকে। তাঁদের সবাই সরকারদলীয় নেতা কিংবা সরকার-সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালী ব্যক্তি। কিন্তু দুদক আইনে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বিবেচনা করে মামলা প্রত্যাহারের সুযোগ না থাকায় ভিন্ন কৌশলে তাঁদের দায়মুক্তি দেওয়া হয়। তদন্তে অভিযোগের ‘সত্যতা’ না পাওয়ায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া, ‘মানবিক বিবেচনা’য় আপিল না করা এবং আপিলের পর উচ্চ আদালতে উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজের আবেদন করা—এ তিন পদ্ধতিতে মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হয়।
কিন্তু গত ১২ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের একটি বেঞ্চ হাজি সেলিমের দুর্নীতির মামলা শেষ মুহূর্তে না চালানোর জন্য দুদকের সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। প্রধান বিচারপতি ওই আদেশে বলেন, শুনানিকালে এভাবে খারিজের আবেদন করা বা মামলা না চালানোর সিদ্ধান্ত নিলে আদালত বিভ্রান্ত হন। হাজি সেলিমের এই মামলায় ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট রায় দিয়েছিলেন। রায়ে নিম্ন আদালতের দেওয়া ১৩ বছরের দণ্ড বাতিল হয়।
দুদকের প্যানেল আইনজীবী খুরশিদ আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, যে আইনি ব্যাখ্যার ভিত্তিতে আপিল বিভাগ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা খুবই স্পষ্ট। তাই একই ধরনের কোনো মামলা না চালানোর সিদ্ধান্ত নিতে আপিল বিভাগ নিরুৎসাহিত করেছেন।
সরকারি দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এভাবে একের পর এক ছাড় পেয়ে গেলেও বিরোধী রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান বা তদন্তে খুবই কঠোর অবস্থানে দুদক। এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমদকে দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে ’৯৬ সালের একটি নোটিশের ধারাবাহিকতায় সম্পদ বিবরণী দিতে হয়েছে দুদকে। গত বছর হিসাব বিবরণী দিতে দুদকে এসে অলি আহমদ সাংবাদিকদের কাছে বলেন, মন্ত্রিত্ব গ্রহণ না করার খেসারত হিসেবে তাঁকে দুদকে আসতে হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ ও তাঁর প্রবাসী ভাই মঞ্জুর আহমদ, বিএনপির নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা, সাবেক স্পিকার জমিরউদ্দিন সরকার, এম মোরশেদ খান, আলী আসগার লবি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা, মোসাদ্দেক আলী ফালু, এহছানুল হক, এ কে এম মোশাররফ হোসেন, ইকবাল হাসান মাহমুদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা দুদকের মামলায় লড়ছেন।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তাঁর ছেলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দুদকের একাধিক মামলা চলছে। তবে খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির একটি অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় দুদক। আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের মামলা পরিচালনার সময় সিঙ্গাপুর থেকে পাচার করা অর্থ ফেরত এনেছে দুদক।
দুদকে আসা অভিযোগ ও অনুসন্ধানের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০০৭ সাল থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন লাখের বেশি অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে প্রায় ২২ হাজার অভিযোগের অনুসন্ধান হয়। বাকি অভিযোগগুলো দুদকের তফসিলভুক্ত না হওয়ায় অনুসন্ধানের জন্য বিবেচনা করা হয়নি। ২২ হাজার অভিযোগ অনুসন্ধানের পর প্রায় চার হাজার মামলা করা হয়। অভিযোগের ‘সত্যতা’ না পাওয়ায় নথিভুক্ত করা হয় প্রায় ১৮ হাজার অভিযোগ। এর মাধ্যমে ১৮ হাজার ৩৯ জন দুদকের অব্যাহতিপত্র পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও ব্যবসায়ী ৬৯৭ জন, বিভিন্নভাবে সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তি ১৫ হাজার ১১ জন এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন অন্তত তিন হাজার।
অন্যদিকে এ সময়ে করা মামলাগুলোর মধ্যে ১ হাজার ১৩১টির অভিযোগপত্র দেওয়া হয় আদালতে। অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় ২ হাজার ৮৬৭টি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে ৩ হাজার ২২ আসামিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে সরকারদলীয় নেতা-কর্মী ও ব্যবসায়ী রয়েছেন ৮৬১ জন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাপক হারে দায়মুক্তির কারণে এ প্রশ্ন ওঠা খুবই স্বাভাবিক যে দুদক বাস্তবেই রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপের ঊর্ধ্বে উঠে পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে কি না।
অভিযোগ থেকে দায়মুক্তির ঘটনাগুলো খতিয়ে দেখা গেছে, অনেক ঘটনায় দৃশ্যমান প্রমাণ থাকলেও দুদকের কর্মকর্তারা এর কোনো প্রমাণ পাননি। নির্বাচন কমিশনে নিজেদের দেওয়া হলফনামায় আর্থিক অনিয়মের প্রমাণ থাকলেও ‘ভুল হয়েছে’ অজুহাত গ্রহণ করে অনেককে দায়মুক্তি দিয়েছে দুদক। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বেশ জোরালো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আলোচিত অনেক ব্যক্তিত্ব রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দায়মুক্তি পেয়েছেন বলে কথিত রয়েছে।
নবম জাতীয় সংসদের হলফনামা নিয়ে দুদকের অনুসন্ধান শেষে হলফনামায় তথ্য দিতে ‘ভুল হয়েছে’ যুক্তি গ্রহণ করে আ ফ ম রুহুল হক ও আসলামুল হককে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় সংস্থাটি। সরকারদলীয় সাংসদ এনামুল হকের বিরুদ্ধে ২১৩ কোটি টাকারও বেশি সম্পদ গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে অনুসন্ধান কর্মকর্তা মামলার সুপারিশ করলেও তাঁকে অব্যাহতি দেয় কমিশন। তবে সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান, সাংসদ আবদুর রহমান বদি, বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দীন চৌধুরী ও সাতক্ষীরার সাবেক সাংসদ আবদুল জব্বারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।
মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বন্ধুদের সম্মাননা দেওয়ার সময় ক্রেস্টের সোনা জালিয়াতির অনুসন্ধানের কাজ শুরু হলেও দীর্ঘদিনেও এ বিষয়ে তেমন অগ্রগতি নেই।
রেলওয়ের দুর্নীতির কালো বিড়াল ধরার ঘোষণা দিলেও দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হওয়ার অভিযোগ ওঠে সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তর বিরুদ্ধে। কিন্তু ঘুষের তথ্য ফাঁসকারী ইউসুফ আলী মৃধার গাড়িচালক মো. আলী আযম প্রকাশ্যে সাক্ষ্য দিতে না আসায় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তর বিরুদ্ধে অভিযোগ নথিভুক্ত করে তাঁকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়। এ ঘটনার পর রেলওয়ের নিয়োগ-দুর্নীতির অভিযোগে ১৩টি মামলা করে দুদক। ওই সব মামলার প্রধান আসামি ইউসুফ আলী মৃধাকে চূড়ান্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে ছয়টি মামলার অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
বহুল আলোচিত হল-মার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ উঠলেও মামলায় তাঁকে আসামি করেনি দুদক। দায়মুক্তি দেয় অনুসন্ধান পর্যায়েই। সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকেও মামলায় আনা হয়নি। বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনায় ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চু ও ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সংশ্লিষ্টতার তথ্য থাকলেও দুদকের করা ৫৬টি মামলার একটিতেও আবদুল হাই বাচ্চু বা পর্ষদের কাউকে আসামি করা হয়নি।
পেট্রোবাংলায় নিয়োগ-দুর্নীতির অভিযোগে সংস্থার সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক হোসেন মনসুরের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করে প্রতিবেদন দেওয়া হলেও মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের আগের মেয়াদে ৪০৩টি হজ এজেন্সিকে লাইসেন্স দেওয়ার ঘটনায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শাহজাহান মিয়ার বিরুদ্ধে কোনো অনুসন্ধান চালায়নি দুদক। অথচ প্রতিমন্ত্রীর এপিএস সৌমেন্দ্র লাল চন্দর বিরুদ্ধে মামলা হয়।
এ ছাড়াও বিভিন্ন ঘটনায় সাম্প্রতিক সময়ে দায়মুক্তি পেয়েছেন ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তাসহ অনেকে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাংসদ হাজি সেলিম, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন, ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান, আনন্দ শিপইয়ার্ডের মালিক আবদুল্লাহিল বারী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল হুদা, ইউসিবিএলের এমডি মুহাম্মদ আলী, সোনালী ব্যাংকের সিবিএর সাধারণ সম্পাদক হাসান খসরু, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইউনুছুর রহমান, পুলিশের ডিআইজি (এসবি) মো. রফিকুল ইসলাম, এসপি মিজানুর রহমান প্রমুখ।

মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৫

রাজস্ব আদায় ১৪% বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি ৮ হাজার কোটি টাকা

রাজস্ব আদায় ১৪% বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি ৮ হাজার কোটি টাকা
চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাস জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে ৫৪ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা। রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রাথমিক হিসাবে দেখা গেছে, পূর্বের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এ রাজস্ব ১৪ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের একই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৪৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। অবশ্য এনবিআরের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ মাসে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয় নি। আলোচ্য সময়ে লক্ষ্যমাত্রার চাইতে রাজস্ব আদায় কম হয়েছে ৮ হাজার ৮ কোটি টাকা বা ১৩ শতাংশ। জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৫ মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬২ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা।
সূত্র জানিয়েছে, সর্বশেষ গত নভেম্বরে রাজস্ব আদায়ে বড় উল্লম্ফন দেখা গেছে। আলোচ্য সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১২ হাজার ৬৮ কোটি টাকা যা গত বছরের নভেম্বরের তুলনায় ২৩ শতাংশ বেশি। গত বছরের নভেম্বরে আদায় হয়েছিল ৯ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছর ২৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৭২০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে এনবিআরকে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, সার্বিক পরিস্থিতিতে বছর শেষে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সমপ্রতি এক প্রাক্কলনে জানিয়েছে, অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রার চাইতে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি অন্তত ৩০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে।
অবশ্য এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান মনে করেন, বছর শেষে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। ইত্তেফাককে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে রাজস্ব আদায়ে গতি বেড়েছে। গেল নভেম্বরের রাজস্ব আদায়ে ২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এর বড় প্রমাণ। তিনি বলেন, পেট্রোবাংলা ও বিপিসি’র কাছে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকার বকেয়া রাজস্ব আদায়ে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অন্যদিকে মামলায় আটকে থাকা ৩১ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব উদ্ধারেও তত্পরতা শুরু হয়েছে। এছাড়া অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড  বাড়ার ফলে আমদানি রপ্তানিতে গতি ফেরা, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) বাস্তবায়নে অগ্রগতির ফলে রাজস্ব আদায় বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরের শুরুতে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হলেও কাঙ্খিত পরিমানে আদায় না হওয়ায় পরবর্তীতে তা কমিয়ে ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়। বছর শেষে অবশ্য ওই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করা হলেও প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ শতাংশের কিছু বেশি। চলতি বছর প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৯ শতাংশ। এ লক্ষ্যমাত্রাকে উচ্চাভিলাষী আখ্যা দিয়ে অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, স্বাধীনতার পর কখনোই ২৯ শতাংশ হারে রাজস্ব আদায় বাড়েনি। একবারই ২২ শতাংশ হয়েছিল ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ত্তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। আর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, আমদানি-রপ্তানিতেও আহামরি গতি নেই। বিনিয়োগেও গতি মন্থর। ফলে সার্বিক বিবেচনায় চলতি অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন হওয়ার কথা নয়।

বৃহস্পতিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৫

সিলেট-মৌলভীবাজারে ইউরেনিয়ামের সন্ধান

সিলেট-মৌলভীবাজারে ইউরেনিয়ামের সন্ধান
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা সিলেট ও মৌলভীবাজারের পাহাড়ি অঞ্চলে মূল্যবান পারমাণবিক জ্বালানি ইউরেনিয়াম প্রচুর পরিমাণে রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। পরমাণু বোমার প্রধান উপকরণ হলো এই ইউরেনিয়াম।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দুই জেলার পাহাড়ি অঞ্চলে এই তেজস্ক্রিয় খনিজের ঘনত্বও অনেক বেশি। এখন সরকার এগিয়ে এলেই এই খনিজ থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।

সম্প্রতি রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের (বাপশক) সম্মেলন কক্ষে ‘ইউরেনিয়াম সার্চিং অ্যা- কোয়ান্টিফিকেশন : এন অ্যাটেম্পট অ্যা- সাকসেস’ শীর্ষক এক সেমিনারে এ তথ্য জানান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. একেএম ফজলে কিবরিয়া।

পরমাণু শক্তি কমিশনের নিউক্লিয়ার সেফটি, সিকিউরিটি ও সেফগার্ডস বিভাগের প্রধান এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জানান, সিলেট ও মৌলভীবাজারের বেশ কয়েকটি স্থান থেকে উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয়তাসম্পন্ন পাথর সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এসব পাথরে ইউরেনিয়ামের উপস্থিতি রয়েছে। কিছু কিছু পাথরে উচ্চমাত্রার ইউরেনিয়ামও রয়েছে, যার ঘনত্ব ৫০০ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন) এরও বেশি।

ড. ফজলে কিবরিয়া জানান, পাথর সংগ্রহ করে ‘গামা স্প্রেকট্রোস্কপি’ পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে এগুলোতে ইউরেনিয়াম এর সন্ধান পাওয়া পায়। পরে ‘এনার্জি ডিসপার্সিব এক্সরে’ পরীক্ষার মাধ্যমে নমুনায় ইউরেনিয়ামসহ অন্যান্য সম্ভাব্য মৌল শনাক্ত করা হয়। তিনি জানান, কিছু কিছু পাথরে উচ্চমাত্রার ইউরেনিয়াম রয়েছে। এটা অত্যন্ত আশাব্যাঞ্জক খবর।

তিনি আরো জানান, জাপান ও কোরিয়ায় কয়েকটি নমুনা পাঠানো হয়েছিল। দুই দেশের পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফলের সাথে বাংলাদেশের ফলাফল সঙ্গতিপূর্ণ। এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, এটাই বাংলাদেশে প্রথম চেষ্টা যার মাধ্যমে সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলাগুলোর নমুনা সংগৃহিত ঠিক কোন স্থানে কতো ঘনত্বের ইউরেনিয়াম রয়েছে, সেসব স্থানের জিপিএস রেকর্ড সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।



ড. ফজলে কিবরিয়া জানান, দেশে ইউরেনিয়াম রয়েছে এমন খবর জানা থাকলেও লোকেশনের সঠিক ডাটাবেজের অভাবে সেসব ফলাফল বর্তমান সন্ধানে তেমন কাজেই আসেনি। এমনকি কোনো কোনো স্থানে ইউরেনিয়ামের কোনো অস্তিত্বই পাওয়া সম্ভব হয়নি। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) প্রকাশিত ইউরেনিয়াম উত্তোলন সম্বন্ধীয় বইয়ে উল্লেখিত তথ্য মতে, বিশ্বব্যাপী যেসব খনি থেকে বর্তমানে ইউরেনিয়াম উত্তোলন করা হচ্ছে সেগুলোর অধিকাংশতেই এর ঘনত্ব ৩০০-১০০০ পিপিএম। এটা খুশির খবর যে, আমাদেরও উত্তোলনযোগ্য ঘনত্বের ইউরেনিয়াম রয়েছে। এখন প্রয়োজন কতোটুকু এলাকাজুড়ে এমন ঘনত্বের ইউরেনিয়াম রয়েছে এবং দেশের আর কোথায় কোথায় এমন ঘনত্বের ইউরেনিয়াম রয়েছে তা খুঁজে বের করা। এ জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন ‘বাপশক’ এর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক ড. দিলীপ কুমার সাহা, ভৌত বিজ্ঞান বিভাগের পরিচালক ড.
আলেয়া বেগম, মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক প্রকৌশলী আনিছা বেগম, খাদ্য ও তেজস্ক্রিয় ইনিস্টিটিউটের পরিচালক ড. খোরশেদ আলম, বৈজ্ঞানিক তথ্য বিভাগের পরিচালক ড. হিমাংশু, প্রকৌশল বিভাগের পরিচালক প্রকৌশলী জাফর সাদেক, তেজস্ক্রিয় খনিজ ইউনিটের প্রাক্তন পরিচালক ড. ইউনুস আকন্দ প্রমুখ। সেমিনারে তেজস্ক্রিয় পদার্থের ওপর গবেষণা করেন এমন ১০০ জন বিজ্ঞানীও অংশ নেন।


ব্যাপক সম্ভাবনার হাতছানি, উদ্যোগ নেই ৪০ বছরেও

বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশন সূত্র জানায়, ১৯৭৫ সালে মৌলভীবাজার জেলার তৎকালীন কুলাউড়ার উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ফুলতলা ইউনিয়নের হারাগাছা পাহাড়ে সন্ধান পাওয়া যায় ইউরেনিয়ামের। পরবর্তীকালে তৎকালীন সিনিয়র ভূতত্ত্ববিদ ড. ইউনূস এর নেতৃত্বে কমিশনের একটি দল হারাগাছা পাহাড়ে অনুসন্ধান কাজ চালিয়ে ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করেন। কমিশনের অনুসন্ধানে ইউরেনিয়াম প্রাপ্তির সম্ভাবনাও নিশ্চিত হয়। তারপরও খনিজ পদার্থ আহরণ বা উত্তোলনের ব্যাপারে তখনো কোনো পদক্ষেপ সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয়নি।

১৯৮০ সালে পুনরায় দেশের একমাত্র ইউরেনিয়াম প্রকল্প এলাকা হারাগাছা পাহাড়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করা হয়। সেইসাথে অন্যান্য খনিজ সম্পদের ব্যাপারেও ব্যাপক অনুসন্ধান চালানো হয়েছিল। পরবর্তীতে ক্ষমতার পালাবদলের সাথে সাথে প্রকল্পটির কার্যক্রমগুলো মুখ থুবড়ে পড়ে। ১৯৯১ সালে আবারো অনুসন্ধান কাজ শুরু হয়। সে সময়ে বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের সিনিয়র ভূতত্ত্ববিদ ড. ইউনূস জাপানের আণবিক জ্বালানি বিষয়ক গবেষণাগারে হারাগাছা এলাকা থেকে সংগৃহিত নমুনা পরীক্ষার পর এখানে ইউরেনিয়ামের অস্তিত্ব পুনরায় নিশ্চিত করেন। সেই সাথে এ পাহাড়ে তেল, গ্যাস ও কয়লা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, হারাগাছা ছাড়াও বৃহত্তর সিলেট ও চট্টগ্রামের আরো প্রায় তিন শতাধিক স্থানে প্রতি ১০ লাখ মাটিকণার মধ্যে ৫০০-১৩০০ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম কণা পাওয়া গেছে। অর্থাৎ এসব স্থানে ইউরেনিয়াম প্রাপ্তির হার ৫০০-১৩০০ পার্টস পার মিলিয়ন (পিপিএম)।

আণবিক শক্তি কমিশন সূত্রে জানা গেছে, পারমাণবিক বোমা তৈরি এবং পারমাণবিক চুল্লিতে শক্তি উৎপাদক হিসেবে এই তেজস্ক্রিয় পদার্থ ব্যবহৃত হয়। ২০০৯ সালের শেষ সময়ে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা কর্তৃক পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন পেয়েছে বাংলাদেশ। ফলে দেশে পারমাণবিক বিদ্যুত উৎপাদনের মূল উপাদান ইউরেনিয়াম অনুসন্ধান ও উত্তোলন প্রয়োজন। ২০০৯ সালের ২৯ নভেম্বর সরকারের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) এনামুল হক সিলেটসফরকালে জানান, জুড়ী উপজেলায় আবিষ্কৃত ইউরেনিয়াম আকরিক প্রকল্পটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে আণবিক শক্তি কমিশন। প্রাথমিক কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর জুড়ীতে আবিষ্কৃত ইউরেনিয়াম আকরিক প্রকল্প থেকে ইউরেনিয়াম উত্তোলনের উদ্যোগ নেয়া হবে। কিন্তু অধ্যাবধি বাস্তবে এ প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি।

ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর এবং পারমাণবিক শক্তি কমিশন থেকে প্রাপ্ত তথ্যে, ১৯৮৫ সালে তৎকালীন মৌলভীবাজারের কুলাউড়া (বর্তমানে জুড়ী) উপজেলার ফুলতলা ও কুলাউড়া উপজেলার সাগরনাল এবং সিলেটের জৈন্তাপুর এলাকায় অনুসন্ধান চালিয়ে ইউরেনিয়ামের সন্ধান পাওয়া যায়। ইউরেনিয়াম অনুসন্ধানের জন্য গত ২৭ বছরে ওইসব এলাকায় ৩০টি অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়েছে। ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফরের সহাতায় এ কাজ করে পারমাণবিক শক্তি কমিশন। পরবর্তীতে পারমাণবিক শক্তি কমিশন খনন কাজ বন্ধ করে দেয়। পরে আর নতুন কোনো অনুসন্ধান চালানো হয়নি।

বাংলাদেশে এ পর্যন্ত প্রাপ্ত খনিজ সম্পদের মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক সম্পদ জ্বালানি তেল, গ্যাস, কয়লা, চুনাপাথর, ইউরেনিয়াম, কাঁচবালি, চীনামাটি, কঠিন শিলা, পিট কয়লা, ভারি মেটাল ও লাইম স্টোন। মূল্যবান এসব খনিজ সম্পদের প্রায় সবকয়টিরই অস্তিত্ব রয়েছে সিলেট বিভাগে।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে বড়লেখার হাকালুকি হাওরে পিট কয়লার সন্ধান পাওয়া গেছে। এ অঞ্চলে প্রাপ্ত খনিজ সম্পদ যথাযথভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হলে ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ মধ্যআয়ের দেশে পরিণত হবে। খনিজ সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার সম্ভব হলে মাথাপিছু এ দেশের জাতীয় আয় দাঁড়াবে ৮২৫ ডলার থেকে সাড়ে ৩ হাজার ডলারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার হারাগাছা পাহাড়ই নয়, কুলাউড়া উপজেলার সাগরনাল এবং সিলেট জেলার জৈন্তাপুরে ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে ইউরেনিয়াম আহরণ করলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী হবে। এছাড়া বড়লেখা উপজেলার সীমান্তবর্তী বোবারথল, সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার টেংরাটিলা, সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার কৈলাশটিলায়ও ইউরেনিয়াম প্রাপ্তির উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান জানান, জুড়ীতে ইউরেনিয়াম, মাধবকুণ্ডের পেছনে সীমান্তবর্তী বিওসি টিলা ও ফুলছড়া চা বাগানে তৈলসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর রয়েছে। এইসব খনিজ সম্পদকে কাজে লাগানোর ব্যাপারে একটি রিপোর্ট খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় থেকে ২০১১ সালের নভেম্বর মাসের শেষদিকে একটি টিম মৌলভীবাজারে আসে। এরপর মন্ত্রণালয় থেকে অদ্যাবধি এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। এবার নিদের্শনা আসলে কাজ শুরু করা হবে।More