মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই, ২০১৫

বাংলাদেশের সুন্দরবনে আর মাত্র ১০৬টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার অবশিষ্ট আছে

সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশের সুন্দরবনে আর মাত্র ১০৬টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার অবশিষ্ট আছে৷ ক্যামেরা ক্যাপচার পদ্ধতিতে পাওয়া এ সংখ্যায় বিস্মিত হয়েছেন বিশেষজ্ঞসহ অনেকই৷
বন অধিদফতরের বন্যপ্রাণী অঞ্চলের বন সংরক্ষক তপন কুমার দে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ক্যামেরা ক্যাপচার পদ্ধতির জরিপে বাংলাদেশ এবং ভারতীয় সুন্দরবনে ৮৩ থেকে ১৩০টি বাঘের সন্ধান পাওয়া গেছে৷ এর গড় হিসেবে বাংলাদেশ অংশে প্রকৃত বাঘের সংখ্যা সর্বোচ্চ ১০৬টি হতে পারে৷''
অথচ এর আগে, ২০০৪ সালে, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও ভারতের বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় পায়ের ছাপের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত জরিপে ছয় হাজার বর্গকিলোমিটারের সুন্দরবনে ৪৪০টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার গণনা করা হয়৷ এর মধ্যে ১২১টি পুরুষ, ২৯৮টি বাঘিনী এবং ২১টি শিশু বাঘ ছিল বলে জানা যায়৷ এরপর ২০০৬ সালে ক্যামেরা ট্র্যাপিং ও আপেক্ষিক সংখ্যা পদ্ধতি অনুসরণ করে সুন্দরবনের এক শুমারিতে দুই শ'টি বাঘের কথা বলা হয়েছিল৷ কিন্তু এবার ক্যামেরা ক্যাপচার পদ্ধতিতে এই গণনা করা হলে আগের করা পায়ের ছাপ পর্যবেক্ষণ বা ‘পাগ মার্ক' পদ্ধতির ফলাফলটি ভুল প্রমাণিত হলো৷
তপন কুমার দে বলেন, ‘‘সর্বশেষ জরিপে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে যে বাঘের সংখ্যার কথা বলা হচ্ছে, তা মোটামুটি নির্ভুল৷ তিনি বলেন, ক্যামেরা ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জরিপ শেষ হয় গত এপ্রিল মাসে৷ এর আগে সুন্দরবনের ভারতীয় অংশে ৭৪টি বাঘ থাকার কথা বলা হয় অন্য একটি জরিপে৷''
উল্লেখ্য, সুন্দরবনের মাত্র ৪০ শতাংশ ভারতের মধ্যে পড়ে৷'
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যার অধ্যাপক ও বাঘ বিশেষজ্ঞ মনিরুল খান জানান, ‘‘নতুন জরিপে বাঘ কমে যাওয়ার আশঙ্কাই সত্যি হলো৷ তবে বাঘের সংখ্যা আমাদের শঙ্কার চেয়েও অনেক কমে গেছে৷''
তিনি জানান, ‘‘এর আগে আমার নিজস্ব গবেষণায় দুই শ'টির কাছাকাছি বাঘ থাকার তথ্য পেয়েছি৷'' তার কথায়, ‘‘চোরাশিকার ও বনাঞ্চলের আশেপাশে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণেই বাঘের সংখ্যা কমছে৷ বাঘের খাবার এবং আবাস এখন হুমকির মুখে৷ তাই সরকারের উচিত বাঘ রক্ষায় আরো পদক্ষেপ নেয়া৷''
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান ও ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী অধ্যাপক মো: আনোয়ারুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘বনবিভাগ আগে ৪৪০টি বাঘ থাকার কথা বলেছে, এখন বলছে ১০৬টি৷ সরকারি এই তথ্য আমাদের মানতে হবে৷ তবে বাঘ যে কমে যাচ্ছে, এটাই সত্য৷ চোরাকারবারিদের শিকার আর খাবার সঙ্কটে বাঘ কমছে৷''
তাই তিনি বাঘের সংখ্যা কমে যাওয়ার প্রবণতা রোধ এবং বিপন্ন এ প্রজতি রক্ষায় এখনই সুন্দরবনে পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ সব ধরনের প্রতিনিধির অংশগ্রহণে স্বাধীন ‘অ্যান্টি পোচিং ইউনিট' গঠনের দাবি জানান৷
ওদিকে ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড' জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী বাঘ বিলুপ্তির শঙ্কায় রয়েছে তারা৷ প্রায় এক লাখ বাঘ থেকে এই সংখ্যা এখন এক হাজার নয় শ' থেকে তিন হাজার ছয় শ'তে নেমে এসেছে৷
‘ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া'-র ওয়াই. ভি. ঝালা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘এ সংখ্যা এক ধরনের বাস্তবতা৷ তার মতে, ‘‘সুন্দরবনে আগে ৪৪০টি বাঘ থাকার তথ্য একটি কল্পকথা৷ সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে সর্বোচ্চ দুই শ'টি বাঘ থাকতে পারে৷''

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন