মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৫

রাজস্ব আদায় ১৪% বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি ৮ হাজার কোটি টাকা

রাজস্ব আদায় ১৪% বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি ৮ হাজার কোটি টাকা
চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাস জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে ৫৪ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা। রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রাথমিক হিসাবে দেখা গেছে, পূর্বের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এ রাজস্ব ১৪ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের একই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৪৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। অবশ্য এনবিআরের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ মাসে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয় নি। আলোচ্য সময়ে লক্ষ্যমাত্রার চাইতে রাজস্ব আদায় কম হয়েছে ৮ হাজার ৮ কোটি টাকা বা ১৩ শতাংশ। জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৫ মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬২ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা।
সূত্র জানিয়েছে, সর্বশেষ গত নভেম্বরে রাজস্ব আদায়ে বড় উল্লম্ফন দেখা গেছে। আলোচ্য সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১২ হাজার ৬৮ কোটি টাকা যা গত বছরের নভেম্বরের তুলনায় ২৩ শতাংশ বেশি। গত বছরের নভেম্বরে আদায় হয়েছিল ৯ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছর ২৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৭২০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে এনবিআরকে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, সার্বিক পরিস্থিতিতে বছর শেষে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সমপ্রতি এক প্রাক্কলনে জানিয়েছে, অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রার চাইতে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি অন্তত ৩০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে।
অবশ্য এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান মনে করেন, বছর শেষে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। ইত্তেফাককে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে রাজস্ব আদায়ে গতি বেড়েছে। গেল নভেম্বরের রাজস্ব আদায়ে ২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এর বড় প্রমাণ। তিনি বলেন, পেট্রোবাংলা ও বিপিসি’র কাছে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকার বকেয়া রাজস্ব আদায়ে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অন্যদিকে মামলায় আটকে থাকা ৩১ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব উদ্ধারেও তত্পরতা শুরু হয়েছে। এছাড়া অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড  বাড়ার ফলে আমদানি রপ্তানিতে গতি ফেরা, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) বাস্তবায়নে অগ্রগতির ফলে রাজস্ব আদায় বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরের শুরুতে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হলেও কাঙ্খিত পরিমানে আদায় না হওয়ায় পরবর্তীতে তা কমিয়ে ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়। বছর শেষে অবশ্য ওই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করা হলেও প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ শতাংশের কিছু বেশি। চলতি বছর প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৯ শতাংশ। এ লক্ষ্যমাত্রাকে উচ্চাভিলাষী আখ্যা দিয়ে অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, স্বাধীনতার পর কখনোই ২৯ শতাংশ হারে রাজস্ব আদায় বাড়েনি। একবারই ২২ শতাংশ হয়েছিল ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ত্তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। আর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, আমদানি-রপ্তানিতেও আহামরি গতি নেই। বিনিয়োগেও গতি মন্থর। ফলে সার্বিক বিবেচনায় চলতি অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন হওয়ার কথা নয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন